শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

কিপ্টুস!!!

আমি তখন স্কুলে পড়ি, ক্লাস এইট কিংবা নাইনে। কোন এক কোরবানী ঈদের ঘটনা।

কোরবানীর ঈদে নামাজ পড়ে সবাই মোটামুটি ব্যস্ত থাকে কোরবানী দেওয়া নিয়ে। মাংস কাটা শেষ হলে আত্মীয় বা পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে মাংস দেওয়ার পালা। বিকেল বেলা বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজী আর সন্ধ্যার পর বিভিন্ন বন্ধুদের বাসায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া - এই ছিল শিডিউল।

কিছুদিন যাবৎ এক টিচার এর কাছে একসাথে পড়ার সুবাদে আমাদের নতুন একটি বন্ধু জুটে গেছে। যা হোক, মূল ঘটনায় ফেরৎ আসি। সেই ঈদে মাংস কাটা শেষ হলে, আমি বের হয়েছি আমার বন্ধুদের বাসায় মাংস দেওয়ার জন্য। আমি আর আমার আর এক বন্ধু (আমরা পাশাপাশি বাসায় থাকতাম) ঠিক করলাম, দুই জন মিলে একসাথে যাবো। তো নতুন যে বন্ধু হয়েছে, তার বাসায় গিয়ে যখন হাজির হলাম তখন দেখি আংকেল (আমার বন্ধুর বাবা) বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে আছেন। আমাদের দেখে উঠে বললেন, আরে বাবা তোমরা, আস আস। কোলাকুলি পর্ব শেষ হবার পর আমরা মাংসের পুটলা উনার হাতে দিয়া বললাম, আংকেল যাই। আংকেল বলে, যাই মানে? ঈদের দিন আসছ, না খাইয়া কেমনে যাইবা। আমরা বললাম, না আংকেল, অনেকগুলা জায়গায় যাইতে হবে। সন্ধ্যার পরে আসতেছি। আংকেল বলে, আরে আসছ যখন, খাইয়া যাও। তোমার চাচী তো মাংস রান্না কইরা ফেলছে, একটু খাইয়া যাও। শেষে জোরাজোরিতে রাজি হলাম। আমাদের ভিতরের রুমে নিয়ে বসানো হলো। এর একটু পর আংকেল ভিতর থেকে আসলো, হাতে দুইটা প্লেট, দুইজনের জন্য। প্লেট দেখে তো আমাদের দুইজনের চক্ষু চড়কগাছ। দুইটা প্লেটে এক টুকরা করে দুইটা মাংস, আর দুইটা কাটা চামচ। আমরা একজন আর একজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে শেষপর্যন্ত হাতদিয়া মুখে তুলে খেয়ে ফেললাম। বাসা থেকে বের হবার পরে, আমার বন্ধু আর আমি প্রায় একসাথে বলে উঠলাম, কিপ্টুস।

ঘটনা এইখানেই শেষ নয়। সন্ধ্যার পরে আমরা ৯ বন্ধু মিলে বাসায় বাসায় ঘুরছি। ফেরার পথে রাস্তায় নতুন বন্ধুর সাথে দেখা, সে বলল বাসায় আয়, সারাদিন খুব দৌড়ের উপর ছিলাম, মাংস দিতে মটর সাইকেলে গ্রামের বাড়ী গেছিলাম। আমি আর আমার সেই বন্ধু (যে আগের বার গিয়েছিল) বললাম, দোস্ত খুব টায়ার্ড লাগতাছে, এখন বাসায় যাই, পরে যামু তোর বাসায়। সে নাছোড়বান্দা। কিছুতেই রাজি হয়না। শেষপর্যন্ত বন্ধুত্বের দোহাই দেওয়াতে আবার যেতে হলো। এবার আংকেল, আন্টি সবার সাথে দেখা। আড্ডাবাজির একপর্যায়ে আমরা বললাম উঠি, রাত হয়ে গেছে। আংকেল বলে, আরে খাওয়া দাওয়া করে যাও। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, না আংকেল, খিদে নেই। সবার বাসায় বাসায় গিয়ে খাইতে হইছে, পেট ভর্তি। আংকেল বলে, আরে এখনই তো খাবার সময়, তোমাদের মত বয়সে .......।

কি আর করা, বসে আছি। এমন সময় ভিতর থেকে আমাদের নতুন বন্ধু আর তার বড়টা দেখি খাবার নিয়ে আসলো। একটা প্লেটে মাংস, একটা প্লেটে কাটাচামচ, আর আরো কিছু এক্সট্রা প্লেট। আমি দেখতেছি, আমার বন্ধুরা কি করে। মজা লওয়ার চেষ্টা ছিল। হঠাৎ দেখি, কেউ একজন আমার কানে কানে বলতেছে, দেখ দেখ, আমরা টোটাল ৯ জন, আর প্লেট দিছে ৭ টা, চামচও ৭টা, মাংসও ৭ পিস। আমি বললাম, আমরা দুপুরে একবার খাইয়া গেছি, তাই আমাদের ২ জনরে বাদ দিছে।

আমার নতুন বন্ধু দিকে চেয়ে দেখি বেচারা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। পরে আর কোনদিন আমার ওই বন্ধু ওদের বাসায় যেতে বলেনি।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন