শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

অধরা

এক.

মোবাইল অন করার পর দেখি ক্রমাগত কয়েকটি টেক্সট মেসেজ এসে গেল। কেন মোবাইল অফ সেটির কৈফিয়ত চেয়ে সবগুলো মেসেজ। একটি একটু আলাদা, তাতে লিখা, আমি আগামী মঙ্গলবার যাচ্ছি, তুমি যদি চাও তাহলে আমার সাথে যেতে পার। স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে, যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ন আমার ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। কিন্তু আসলে ঘটনা সেরকম না, এই মেসেজ এর মানে হলো, আমি আগামী মঙ্গলবার যাচ্ছি, তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে। আমি ফিরতি মেসেজ পাঠালাম, মঙ্গলবারে তো আমার অফিস অাছে। দুই মিনিটের মাথায় যে রিপ্লাই এলো, তাতে আমার রাজি না হয়ে আর কোন উপায় থাকলো না। সম্পর্কের দোহাই দিলে তখন কি আর কিছু করার থাকে?

অধরার সাথে আমার পরিচয় অনেক আগের, কিন্তু ভালোভাবে মেশা কিছুদিন আগে থেকে। ওর কথাবার্তার মধ্যে সবসময় একটা কর্তৃত্বের সুর থাকে। বিশেষকরে আমাকে যখন কিছু করতে বলে। ভাবখানা এমন যে, তুমি চাইলে করতে পার অথবা নাও করতে পার, কিন্তু আমি যখন বলেছি তখন তোমাকে করতেই হবে। তাড়াহুড়ো করে আমি অফিসে চলে এলাম। অফিসে এসে কল দিলাম,
- তুমি কিসে যেতে চাও, বাস নাকি ট্রেন?
- ট্রেন। সকালের দিকে একটা ট্রেন আছে।
- ঠিক আছে। তাহলে তুমি টিকেট কেটে ফেল। ট্রেন স্টেশন তো তোমার বাসা থেকে কাছেই।
- আচ্ছা ঠিক আছে, টিকেট কাটা হয়ে গেলে আমি তোমাকে জানাচ্ছি।
- একটু আগেভাগেই জানিও। আমাকে আবার ছুটি নিতে হবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি একরকম নিশ্চিত যে, সে টিকেট কাটতে যাবে না। সোমবার এ আমাকে ফোন করে বলবে, 'তুমি টিকেট কাট। কিভাবে কাটবে আমি জানি না, আমি খুব ব্যস্ত, তোমার সাথে পরে কথা হবে'। এরপর আমাকে গিয়েই টিকেট কেটে দিতে হবে। হাতে এখনও তিন দিন সময় আছে। আমি ভাবলাম টিকেট কেটে ফেলি। বিকেলে অফিস থেকে বের হয়ে গিয়ে আমি টিকেট কেটে ফেললাম।

সোমবার সকালে ঘটনা যা ঘটার তাই ঘটলো। অধরার ফোন। আমি বললাম, আমার কাছে টিকেট আছে, তুমি এসে নিয়ে যাও। সে বলে, কেন, তুমি যাচ্ছ না। আমি বললাম, যাচ্ছি, তবে সকালের দিকে তো প্রচন্ড জ্যাম থাকে রাস্তায়, তাই আমি এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে উঠবো। সে বলে, আমি যেতে পারবো না, তুমি আমার বাসায় এসে দিয়ে যাও। আমি বললাম, অফিসে বেশ কিছু কাজ জমে গেছে, আজ তো মনে হয় বের হতে পারবো না, আর এগুলো শেষ করতে না পারলে আগামীকাল ছুটি পাওয়া যাবে না। মনে হয় চাপাবাজিতে কিছু কাজ হলো। অধরা বলল, টিকেট লাগবে না, তুমি সিট নাম্বার বল। আমি সিট নাম্বার বললাম।

আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরে গোসল, খাওয়া শেষ করে ব্যাগ গুছালাম। আজকে একটু অাগেভাগেই ঘুমাতে যাবো ঠিক করলাম। কিন্তু বারোটা বাজতে না বাজতেই আবার ফোন।
- আচ্ছা, তুমি কি একটু সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবেনা?
- কেন?
- আমি একা একা ট্রেনে বসে থাকতে পারবো না। তুমি সকালে আমার বাসায় এসে আমাকে নিয়ে যাও।
- দেখ, ট্রেন এর সময়টা একদম অফিস টাইমে। আমার কমপক্ষে দুই ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
- আমি তোমাকে ডেকে দিব।
- (মহা ফ্যাসাদে পড়লাম মনে হচ্ছে।) আচ্ছা আমি তো এয়ারপোর্ট থেকে উঠছিই, নাকি? মাত্র ৩০ মিনিট সময়।
- আমি কিছু বললেই তুমি এটা সেটা বলে পাশ কাটিয়ে যাও। আমার জন্য একদিন একটু আগেভাগে ঘুম থেকে উঠতে পারবে না?
- (ভাল মুশকিল এ পড়া গেল) আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমাকে তোমার বাসা থেকেই নিয়ে আসবো, কিন্তু আমাকে সকাল বেলা ঘুম থেকে ডেকে দিতে হবে।



দুই.

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাইরে গিয়ে আমার তো মাথায় হাত। বাসের লাইনে শত শত লোক। কোন বাস নেই। ট্যাক্সি, সিএনজি অটোরিক্সা কিছুই নেই। আধঘন্টা দাড়িয়ে থাকার পর অনেক কায়দা কসরত করে একটা বাস এ উঠে পড়লাম। এখনও হাতে ঘন্টা দেড়েক এর মত সময় আছে, স্বাভাবিক অবস্হায় থাকলে গিয়ে আবার ফেরত আসা যাবে।

দশ মিনিট যেতে না যেতেই দেখি অবস্হা খারাপ। সামনে পেছনে জ্যাম। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে। আমি এমন এক জায়গায় আছি, এখন বাস থেকে নামলে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। সবকিছু ছবির মত স্হবির হয়ে আছে। দশ মিনিট পর পর বাস একটু একটু করে সামনে আগায়। এইভাবে চলতে থাকলে সারাদিনেও স্টেশনে পৌঁছানো যাবে না। এরই মাঝে অধরার ফোন, 'কোথায় তুমি?' 'আমি বাসে, রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম, আমি মনে হয় তোমার বাসা পর্যন্ত যেতে পারব না। তুমি স্টেশনে চলে আস, আমি সরাসরি স্টেশনে চলে যাচ্ছি।'

ট্রেন ছাড়ার যখন আধঘন্টার মত বাকি, আমি তখনও চারভাগের একভাগ রাস্তাও যেতে পারিনি। এবার আমি ফোন দিলাম, 'রাস্তার যে অবস্হা, তাতে আমি কোনভাবেই স্টেশনে যেতে পারব না, তুমি ট্রেনে ওঠে পড়, আমি এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে উঠবো।' অধরাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম।

বাস থেকে নামার পর দেখি আরো বিপদ। এতক্ষণ তো বাসে ছিলাম, এখন তো দেখি কিছুই পাওয়া যায় না। আমার হাতে সময় আছে আর একঘন্টার মত। কি করবো ভেবে উঠতে পারছি না। এমন সময় আর একটা বাসে ওঠে পড়লাম। সেই একই অবস্হা। আমি বাসের ভেতর থেকে উঁকি-ঝুকি দিয়ে আশে পাশে ট্যাক্সি অথবা সিএনজি খুঁজছি। বাসের লোকজন মনে হয়, আমার কান্ড-কারখানায় বিরক্ত। এমনিতেই বাস এ ভিড়ের জন্য নড়াচড়া করার উপায় নেই তার উপর আবার একজন একবার ডানে আর একবার বামে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অধরা ফোন করে জানালো যে, সে ট্রেনে এবং তার ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। এমনিতে ট্রেন পাঁচ থেকে দশ মিনিট দেরীতে ছাড়ে, আজকে একেবারে ঘড়ির কাটা ধরে ছেড়েছে। এরই নাম কপাল।

আমি যখন মোটামোটি একটু ফাঁকা রাস্তায় এসে পড়েছি তখন দেখি বাস গড়িমসি করা শুরু করেছে, একবার থামে, লোক নামায়, আবার লোক ওঠানোর জন্য এদিক সেদিক দাঁড়ায়। ঘড়িতে দেখি আর দশ বারো মিনিট সময় হাতে আছে। আমি ফোন দিলাম, 'আমি মনে হয় সময়মত স্টেশনে চলে যেতে পারবো। স্টেশনে পৌঁছা মাত্র আমি তোমাকে ফোন দিব। আমি যদি ফোন না দিই তাহলে তুমি ট্রেন থেকে নেমে যাবে।' 'এই অবস্হা? আচ্ছা।' এতক্ষণে একটা খালি সিএনজি পাওয়া গেল। ভাই আমি ট্রেন ধরব, আর পাঁচ-সাত মিনিট আছে, আপনি তাড়াতাড়ি যাবেন। পাঁচ মিনিটের মাথায় অধরার ফোন, 'ট্রেন স্টেশনে চলে এসেছে, কোথায় তুমি?' আমি তখন স্টেশনের কাছাকাছি, 'আমি প্রায় চলে এসেছি, তুমি ফোন রাখ, আমি আসছি।'

আমি যখন স্টেশনের ভেতর ঢুকছি, তখন ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আমার ফোন বাজছে। আমার হাতে ফোন ধরার মত সময় নেই। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে জোরেশোরে একটা দৌড় দিলাম।


তিন.

কোনমতে ট্রেনে উঠতে পেরেছি। এদিকে ফোন বেজেই চলেছে। হাঁপাতে হাঁপাতে আমি ফোন ধরলাম,
- আমি ট্রেনে উঠেছি, একটু অপেক্ষা কর, আমি আসছি।
- ট্রেনে উঠেছ মানে, তুমি আসছনা দেখে তো আমি ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। তোমার তো স্টেশনে এসে ফোন দেওয়ার কথা।
- ফাজলামি করবে না। আমি সিটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।
এই কথা বলামাত্র সে ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিল।

আমি সিটে পৌঁছে দেখি, সিটে কেউ নেই, ট্রেন তখন জোরে চলা শুরু করেছে। অধরাকে ফোন দিলাম। তার ফোনটি বন্ধ।



-- এই লিখার সমস্ত চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে বা অন্য কারোর মগজ-প্রসুত কল্পনার সাথে মিলে গেলে লেখককে দায়ী করা যাবে না।

ছেড়াপাতা!!!

১.

পারভেজ সাজ্জাদ ওরফে মোথা ভাই। মোথা ভাই নামের পিছনের হিস্টোরি হইল, আমাগো সাজ্জাদ ভাই নতুন সিগারেট খাওয়া শিখছে। তো শিহান তারে উপদেশ দিছে যে, যতদিন তুই নিজের টাকা দিয়া না কিনতেছস, তত দিন তুই অন্যের সিগারেট এর মোথা খাবি। সেই থেকে বাকি জুনিয়রগুলা তার নাম দিছে মোথা ভাই। এখন ঘটনা হইলো, এই নামে ডাকলে আমাগো মোথা ভাই হেভি চেইতা যায়। কিন্তু কোন লাভ হয় না। পুলাপাইন কম্পুটারের ডেস্কটপ এ মোথা ভাই লিখা দিয়া যায়। সিগারেট খাইয়া বাইরে থেকে নিভানো মোথা নিয়া আসে উনার জন্য। যাই হোক, একদিন মনে হয়, আমাগো মোথা ভাই এর মাথা একটু বিগড়াইয়া ছিল, সে শ্যামলরে (এক জুনিয়র) ধইরা দিল মাইর। কইল, নেক্সট টাইম ডাকলে খবর আছে।

মাইর খাইয়া শ্যামল এর মাথাই নষ্ট। তার মনে ব্যাপক কষ্ট। কষ্টের কারন আবার মাইর খাওয়া না। মোথা ভাই নামে ডাকতে না পারার যন্ত্রণা। কিছুক্ষণ পরে সে আইসা দেখি মিটি মিটি হাসতেছে। আমি জিগাইলাম কি হইছে? শ্যামল আমারে কয়, সাজ্জাদ ভাই এর নতুন নাম দিছি, পারু ভাই। আমি বললাম, পারু কেন? সে বলে, পারভেজ এর সংক্ষেপ পারু। সাজ্জাদ ও ততক্ষণে খেইপা গেছে।

পারভেজ সাজ্জাদ আমার বন্ধু মানুষ। ওরে একটা মাইয়ার নাম এ ডাকবো শুইনা আমার খারাপ লাগলো। মনে ব্যাপক কষ্ট পাইলাম। আমি কইলাম, না কাজটা একেবারে ঠিক হয় নাই। শ্যামলরে বললাম, ওরে মেয়েদের নামে ডাকতেছিস কেন? সংক্ষেপ করার ইচ্ছা হইলে নিয়ম মাইনা করতে হইবো। পারভেজ থেকে পা আর সাজ্জাদ থেকে সা নিয়া পাসা (পাছা) ভাই ডাকতে পারস।

বইলা আমি নাই। কে যায় গায়ে পইরা মাইর খাইতে। পরে শুনলাম, সাজ্জাদ তার মোথা নাম একসেপ্ট করছে। এখন তারে আমরা মোথা ভাই নামেই ডাকি।


২.

আমার আরেক বন্ধু আছে গান্জু। গান্জা খাইছে এর কোন প্রমান আমি এখনও জানি না, কিন্তুক সবাই ওরে কলেজ থেইকা নামি এই নামে ডাকে, তাই আমিও ডাকি। ওর লগে ভার্সিটির প্রথমদিকে আমার হেভ্ভি খাতির ছিল।

একদিনের ঘটনা। আমি আর গান্জা গেছি সাইবার ক্যাফেতে। গিয়া আমি মেইল চেক করতেছি। দেখি আমার খালু মেইল করছে। মেইলের ভাষা একটু বন্ধু বন্ধু টাইপ। আসলে আমার খালুর সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। যাইহোক আমিও একটা রিপ্লাই দিলাম।

সাইবার ক্যাফে থেকে বাইর হইয়া আমরা রিক্সা নিয়া ভার্সিটিতে যাবো। রিক্সাতে উঠে গান্জু আমারে জিগায়, তোর খালুর সাথে তোর তো খুব ভালো সম্পর্ক। আমি বললাম, হ। তার বয়স কত? এইতো ধর ৩৫-৩৬ হইবো। তারপরের কোশ্চেন শুইনা তো আমি হা। শালায় কয়কি?

আমারে জিগায়, তোর খালু কি বিয়া করছে?


৩.

ভার্সিটিতে যখন আমি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, তখনকার ঘটনা। আমাদের এক বন্ধু ছিল, নাম মুকুল। তো সেই পোলা খুব আতেল টাইপের। পরীক্ষা-পড়াশোনা নিয়া তার ব্যাপক টেনশন। তো ১ম সেমিস্টারের ১ম ভাইভা পরীক্ষা চলতেছে। আমার ভাইভা শেষ, কিছুক্ষণ পর মুকুলের ভাইভা শুরু হবে। বোর্ড থেকে বের হইয়া দেখি, সে ব্যাপক টেনশনের সাথে সবাইরে এইটা সেইটা জিগাইতেছে।

আমারে দেইখা সে আলাদা ডাইকা নিয়া জিগাইলো কি কি কোশ্চেন ছিল। আমি কইলাম। তারপর সে আমারে জিগায়, সে যে ড্রেস পরে আছে তাতে কোন সমস্যা আছে কিনা? আমি দেখলাম, প্যান্ট শার্ট ইন করে জুতা পইরা আছে। জুতা আবার চকচক করতেছে। আমার কাছে সব ঠিকই মনে হইলো।

কিন্তু হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি উকি দিল। আমি ওরে বললাম, তুই যে ইন করছস, সেইটা হাফ না ফুল? সে কয় বুঝাইয়া বল? আমি বললাম, হাফ ইন মানে হইল আন্ডারওয়ার সার্টের নিচে, আর ফুল ইন মানে সার্ট আন্ডারওয়ার এর নিচে যাবে। ভার্সিটির ডেকোরাম অনুযায়ী, ভাইভা বোর্ড এ ফুল ইন করে যাইতে হইবো। মুকুলের তো মাথায় হাত। সে কয়, তার ইন হইল হাফ। আমি কাচুমাচু মুখে বললাম, তাইলে কেমনে কি? সে আমারে তার হাতের বইপত্র দিয়া কইতেছে, দোস্ত তুই একটু দাড়া, আমি বাথরুম থেকে আসতেছি।

বাথরুম থেকে আসার পর ওরে দেইখা আমার যে হাসি পাইছে তা বলার মত না। সে ফুল ইন কইরা আসছে। আর ফুল ইন যাতে বোঝা যায়, সেই জন্য আন্ডারওয়ারটা একটু বাইর কইরা রাখছে :D

কিপ্টুস!!!

আমি তখন স্কুলে পড়ি, ক্লাস এইট কিংবা নাইনে। কোন এক কোরবানী ঈদের ঘটনা।

কোরবানীর ঈদে নামাজ পড়ে সবাই মোটামুটি ব্যস্ত থাকে কোরবানী দেওয়া নিয়ে। মাংস কাটা শেষ হলে আত্মীয় বা পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে মাংস দেওয়ার পালা। বিকেল বেলা বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজী আর সন্ধ্যার পর বিভিন্ন বন্ধুদের বাসায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া - এই ছিল শিডিউল।

কিছুদিন যাবৎ এক টিচার এর কাছে একসাথে পড়ার সুবাদে আমাদের নতুন একটি বন্ধু জুটে গেছে। যা হোক, মূল ঘটনায় ফেরৎ আসি। সেই ঈদে মাংস কাটা শেষ হলে, আমি বের হয়েছি আমার বন্ধুদের বাসায় মাংস দেওয়ার জন্য। আমি আর আমার আর এক বন্ধু (আমরা পাশাপাশি বাসায় থাকতাম) ঠিক করলাম, দুই জন মিলে একসাথে যাবো। তো নতুন যে বন্ধু হয়েছে, তার বাসায় গিয়ে যখন হাজির হলাম তখন দেখি আংকেল (আমার বন্ধুর বাবা) বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে আছেন। আমাদের দেখে উঠে বললেন, আরে বাবা তোমরা, আস আস। কোলাকুলি পর্ব শেষ হবার পর আমরা মাংসের পুটলা উনার হাতে দিয়া বললাম, আংকেল যাই। আংকেল বলে, যাই মানে? ঈদের দিন আসছ, না খাইয়া কেমনে যাইবা। আমরা বললাম, না আংকেল, অনেকগুলা জায়গায় যাইতে হবে। সন্ধ্যার পরে আসতেছি। আংকেল বলে, আরে আসছ যখন, খাইয়া যাও। তোমার চাচী তো মাংস রান্না কইরা ফেলছে, একটু খাইয়া যাও। শেষে জোরাজোরিতে রাজি হলাম। আমাদের ভিতরের রুমে নিয়ে বসানো হলো। এর একটু পর আংকেল ভিতর থেকে আসলো, হাতে দুইটা প্লেট, দুইজনের জন্য। প্লেট দেখে তো আমাদের দুইজনের চক্ষু চড়কগাছ। দুইটা প্লেটে এক টুকরা করে দুইটা মাংস, আর দুইটা কাটা চামচ। আমরা একজন আর একজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে শেষপর্যন্ত হাতদিয়া মুখে তুলে খেয়ে ফেললাম। বাসা থেকে বের হবার পরে, আমার বন্ধু আর আমি প্রায় একসাথে বলে উঠলাম, কিপ্টুস।

ঘটনা এইখানেই শেষ নয়। সন্ধ্যার পরে আমরা ৯ বন্ধু মিলে বাসায় বাসায় ঘুরছি। ফেরার পথে রাস্তায় নতুন বন্ধুর সাথে দেখা, সে বলল বাসায় আয়, সারাদিন খুব দৌড়ের উপর ছিলাম, মাংস দিতে মটর সাইকেলে গ্রামের বাড়ী গেছিলাম। আমি আর আমার সেই বন্ধু (যে আগের বার গিয়েছিল) বললাম, দোস্ত খুব টায়ার্ড লাগতাছে, এখন বাসায় যাই, পরে যামু তোর বাসায়। সে নাছোড়বান্দা। কিছুতেই রাজি হয়না। শেষপর্যন্ত বন্ধুত্বের দোহাই দেওয়াতে আবার যেতে হলো। এবার আংকেল, আন্টি সবার সাথে দেখা। আড্ডাবাজির একপর্যায়ে আমরা বললাম উঠি, রাত হয়ে গেছে। আংকেল বলে, আরে খাওয়া দাওয়া করে যাও। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, না আংকেল, খিদে নেই। সবার বাসায় বাসায় গিয়ে খাইতে হইছে, পেট ভর্তি। আংকেল বলে, আরে এখনই তো খাবার সময়, তোমাদের মত বয়সে .......।

কি আর করা, বসে আছি। এমন সময় ভিতর থেকে আমাদের নতুন বন্ধু আর তার বড়টা দেখি খাবার নিয়ে আসলো। একটা প্লেটে মাংস, একটা প্লেটে কাটাচামচ, আর আরো কিছু এক্সট্রা প্লেট। আমি দেখতেছি, আমার বন্ধুরা কি করে। মজা লওয়ার চেষ্টা ছিল। হঠাৎ দেখি, কেউ একজন আমার কানে কানে বলতেছে, দেখ দেখ, আমরা টোটাল ৯ জন, আর প্লেট দিছে ৭ টা, চামচও ৭টা, মাংসও ৭ পিস। আমি বললাম, আমরা দুপুরে একবার খাইয়া গেছি, তাই আমাদের ২ জনরে বাদ দিছে।

আমার নতুন বন্ধু দিকে চেয়ে দেখি বেচারা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। পরে আর কোনদিন আমার ওই বন্ধু ওদের বাসায় যেতে বলেনি।

ঢাকায় টাকা উড়ে, খালি ধরবার জানতে হয় B-)

ডিসক্লেইমার ১: এই ব্লগ পইরা অতিউৎসাহী কেউ ধরা খাইলে আমার কিছু করার নাই।

ডিসক্লেইমার ২: এই লেখার যাবতীয় চরিত্র ও ঘটনা বাস্তবিক থুক্কু কাল্পনিক ধইরা পড়তে হইবো, লেখক কি চিন্তা কইরা লেখছে সেইটা খুজার চেষ্টা করা যাইবো না।

এইবার তাইলে ঘটনায় আসি। ঘটনা আমার এক বন্ধুর কাছ থেইক্যা শুনা। তার বন্ধুর ঘটনা। আমার বন্ধুর বন্ধুর নাম ধরি রাসেল।

রাসেল একবার খুব টাকা পয়সার সমস্যায় পড়ছে। কি জানি এক দরকারে তার হাজার দশেক টাকার দরকার। কোন ভাবেই টাকার যোগাড় করা যাইতেছে না। এর কাছে, ওর কাছে চাইয়াও কোন লাভ হইতেছে না, কেউ ওরে টাকা ধার দিবার চায় না, অতীত হিস্টোরি কয়, রাসেল টাকা পয়সা ধার নিলে ফেরত দেওয়ার কথা ভুইল্যা যায়। কয়দিন এইদিক সেইদিক কইরা রাসেল গেল তার এক বন্ধুর কাছে, তার বন্ধু কয়, তরে আমি টাকা দিমু না, তয় একখান বুদ্ধি দেই, কামে দিব।

বন্ধুর বুদ্ধি মত রাসেল এক অফিসের দারোয়ানরে ম্যানেজ করল, ৫০০ টাকার বিনিময়ে সে এক শুক্রবারের জন্য অফিসের একটা রুম খোলার ব্যবস্থা করবো। তারপর হইলো আসল কাজ, একটা ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ম্যানেজ করা আর প্রত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া। যাই হোক একাউন্ট ম্যানেজ কইরা সে পত্রিকায় একটা চাকুরির বিজ্ঞাপন দিল ওই অফিসের ঠিকানা দিয়া, শুক্রবারে সরাসরি ইন্টারভিউ, এর সাথে ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট লয়া আইতে হইবো।

যাউগ্গা, যথারীতি ইন্টারভিউ নেওয়া হইছে, রাসেল আর তার ২ বন্ধু মিলা সারাদিন ইন্টারভিউ নিছে। প্রত্যেক প্রার্থীরে জানাইয়া দেয়া হইছে, অন্য এক তারিখ এ পত্রিকায় রেজাল্ট দেওয়া হইবো, পরে আবার বিজ্ঞাপন দিয়া ৬ জনের নাম প্রকাশ করা হইছে যাগো ফাইনাল ইন্টারভিউ এর জন্য সিলেক্ট করা হইছে। এই ৬ জনের কেউ ওইখানে ইন্টারভিউ দিতে আসে নাইক্কা :P

রাসেল পরে আইসা আমার বন্ধুরে কাহিনী কইয়া বলছিল, দোস্ত ঢাকায় টাকা উড়ে, খালি ধরবার জানতে হয়।

ধন্যবাদ!!!

অভিনন্দন বাংলাদেশ দলকে (১টা ছাগল বাদে), দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয় এর জন্য।

আশ রা ফুল ভালো খেললে বাংলাদেশ জিতে, এখন খারাপ খেললেও জিতে। তো ওরে দলে রাখার কোন মানে হয়? শুধু শুধু পাবলিকের টেনশন বাড়ায়, দলের ব্যাটসমেনদের উপর চাপ বাড়ায়।

ধন্যবাদ সাকিব, ফর ক্যাপ্টেনস্ নক।
ধন্যবাদ রাকিব, ফর দ্যাট পার্টনারশিপ।

ধাঁধাঁ : গনিতজ্ঞ এবং গনিত-অজ্ঞ দের জন্য।

শেষ থেকে -
১২, ৩, ৬, ৭, ৪৫, ১০১, ১২, ২১, ১, ১৩, ১, ০, ০, ২, ৪, ০, ২৪, ৩৪, ১, ৩৫।

বলেন তো এই সংখ্যাগুলো কি?

একটু সহজ করে দেই।

শেষ ২০ টার যোগফল : ৩২২; গড় : ১৬.১
শেষ ১০ টার যোগফল : ২২১; গড় : ২২.১

০ আছে : ৩ বার
১ - ৯ আছে : ৮ বার
১০ - ১৯ আছে : ৩ বার
২০ - ২৯ আছে : ২ বার
৩০ - ৪৯ আছে : ৩ বার
৫০ এর বেশি আছে : ১ বার


বি. দ্র. : যারা একটু খোজখবর রাখেন, তারা এর ধারা এর শুরুতে ৩ সংখ্যাটা বসিয়ে নিতে পারেন।

পথ...

মফস্বল শহরের রিকশাওয়ালাদের কাছে বাস কিংবা ট্রেনের যাত্রীরা হলো গিনিপিগ। তারা জানে, এরা দূর থেকে জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে আসে, তখন কোনরকমে বাড়ি যেতে পারলেই এরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, বিশেষকরে রাতের বেলা যেসব ট্রেন বা বাস এসে পৌছায়। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুন বা তিনগুন ভাড়া চাইতেও এরা কার্পণ্য করে না।

আমি তখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কোন এক ছুটিতে বাড়ী যাব। ট্রেন থেকে নেমে রিকশা নেব। ১০ টাকার ভাড়া আমার কাছে ২৫-৩০ টাকা চাচ্ছে। কিছুক্ষণ দরকষাকষি করে আমি ক্লান্ত। মনে মনে ঠিক করলাম, এরপর ভাড়া ঠিক না করে উঠে পড়ব। যা হবার হবে।

"এই রিক্সা যাবে?" আমার এই প্রশ্নের জবাবে এক রিক্সাওয়ালা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। আমি আর কোন কিছু জিঙ্গাসা না করে রিক্সায় উঠে পড়লাম। "নয়াপাড়া চল।" রিক্সাওয়ালা কোন কথা না বাড়িয়ে যাওয়া শুরু করল। রেলস্টেশন থেকে আমার বাসার যাবার জন্য শর্টকাট একটা রাস্তা আছে। রিক্সা ওই পথে না গিয়ে ঘুরপথে যাওয়া শুরু করতেই আমি বললাম, "ঘুরে যাইতেছ কেন? শর্টকাটে যাও।" "ওইদিকের রাস্তা ভাঙ্গা।" - রিক্সাওয়ালার জবাব। আমি বললাম, "ও আচ্ছা, ঠিক আছে।"

আপনে কি করেন? রিক্সাওয়ালার হঠাৎ প্রশ্নে আমি চকিত। আমি বললাম, পড়ালেখা করি। কই পড়েন? সিলেট। ও আচ্ছা, ভার্সিটিতে? আমি বললাম, হু। তুমি সিলেট গেছ কোন সময়? রিক্সাওয়ালার জবাব, না। ততক্ষনে, আমি আমার বাসার কাছাকাছি এসে পড়েছি। সামনে মোড়। আমাদের পাড়ার এলাকা শুরু। আমি কিছু বলার আগেই রিক্সাওয়ালা বামে মোড় নিল। আমি একটু অবাক হলাম, তবে কিছু বললাম না। একটু পরে আবার আমি কিছু বলার আগেই রিক্সাওয়ালা হাত দিয়ে সিগনাল দিয়ে হাঁক দিল, বামে থামবো...। রিক্সা ঠিকঠাক আমার বাসার গেট এর সামনে এসে দাঁড়ালো। এস.এস.সি পাশ করার পর থেকে আমি এখানে থাকি না। কোন রিক্সাওয়ালা আমার বাসা চিনতে পারে সেটা আমার কল্পনাতেও আসার কথা না। আমি রিক্সা থেকে নেমে অবাক হয়ে জিঙ্গাসা করলাম, তুমি আমার বাসা চেন? রিক্সাওয়ালা ঘাড় নেড়ে বলল, আপনে মনে হয় আমারে চিনতে পারেন নাই। আমি শীশ। আপনের সংগে ইস্কুলে পড়তাম। এইটুকু শোনার পর, আমার সারা শরীর যেন স্তব্দ্ধ হয়ে গেল। কিছুদূরে ল্যাম্পপোস্ট, আলো-আধারির মধ্যে আমি তখন তাকে চিনতে পারলাম, আমার স্কুল-জীবনের এক সহপাঠির মুখ। তার সাথে আমার কেটেছে অনেকটা সময়, খেলাধুলা অথবা পড়ালেখায়। সে কোন সময়ই ক্লাসের সেরা কয়েকজনের মধ্যে ছিলনা, আবার একেবারে শেষের সারিরও ছিল না। তুই রিক্সা চালাস কেন? পড়ালেখা করিস নাই? সে মাথা নিচু করে আছে। না, আব্বা মরার পর আর লেখাপড়া করি নাই। মায়ে আছে, ছোট ভাই-বোনরা আছে না? আমার দেখাশুনা করা লাগে।

আমার মনে পড়ে গেল কতবার ওদের বাসায় যেতাম। খেলার সময়, অথবা স্কুল ফাকি দিয়ে নদীতে নৌকায় ঘুরতে যাওয়ার আগে স্কুলব্যাগ ওদের বাড়ীতে রেখে যেতাম। কোনদিনও ওর আব্বার সাথে দেখা হয় নাই। আমিও কখনও জিঙ্গাসা করার প্রয়োজন মনে করিনি। সেও আমার বাসায় মাঝে মাঝে আসতো খেলার মাঠে যাওয়ার আগে। একের পর এক স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে, স্ফটিক স্বচ্ছ্ব সবকিছুই।

রাত বাড়ছে, আমার বাসায় ঢুকতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। মা হয়ত টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে। আমি মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকার একটা নোট বের করলাম। ওর হাতে দিলাম। সে টাকা ফেরত দেবার আগেই আমি বললাম, তুই রেখে দে, আমার কাছে ভাংতি নাই। সে বলে, ভাড়া তো ১০ টাকা। সে আমার দিকে ৯০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, টাকা রাখ, টাকা লাগবে না, তরে অনেকদিন পরে দেখলাম, ভালো লাগলো। পারলে আমার বাসায় আসিস। ঘুইরা যাইস। আমি কোন কথা না বাড়িয়ে রোবোটের মত টাকাগুলো নিলাম। ও বলল, ভালো থাকিস, ভালো ভাবে পড়ালেখা করিস, অনেক বড় হবি। রিক্সা নিয়ে সে চলে গেল। কিছুক্ষণ হতবাক দাড়িয়ে থেকে আমি কলিং বেল টিপলাম।

সারাদিনের লম্বা জার্নিও সেদিন আমার চোখে ঘুম আনতে পারেনি। দু জন শিশু একই রকম স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখা করতে যায়, দু জন কিশোর একই স্বপ্ন বুকে আকড়ে দিন কাটায়। বড় হবে, অনেক বড়। তাদের মধ্যে একজন শীশ এমন অকালেই ঝরে পড়ে! আমাদের স্পন্দন দারিদ্রতার কষাঘাতে এমনভাবে থেমে যায়!!!